আপনি হয়তো অনেক ভালো একজন শিক্ষক বা আপনার স্কুলটি হয়তো অনেক নামকরা একটি স্কুল অথবা আপনার হয়তো দীর্ঘদিনের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে পারে কিন্তু প্রতি বছর প্রতিটি ক্লাসেই এমন একটি বা দু’টি শিশু থাকে যার ব্যাবহার অন্যদের চেয়ে আলাদা বা যে অন্যদের চেয়ে অমনোযোগী বা একটু দুষ্টু। প্রতিটি শিশুর আচরণেই ভিন্নতা থাকে এবং এই কারণে শিশুভেদে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেই শিক্ষককে ক্লাসরুম ম্যানেজ করতে হয়। তবে আমরা আপনাদের সাধারণ কিছু পরামর্শ দিতে পারি যা আপনি আপনার ক্লাসরুমে ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন।
ক্লাসের কোন ঘটনাকে ব্যক্তিগতভাবে গ্রহন করবেন নাঃ
যদি কোন শিক্ষার্থী আপনাকে অসম্মান করে তাহলে মন খারাপ করবেন না বা ভাববেন না যে আপনি ভালো শিক্ষক নন অথবা ছাত্ররা আপনাকে পছন্দ করে না বা আপনি তাদের ভালো কিছু শেখাতে পারছেন না। কারণ একজন শিক্ষক যত ভালোই হোন না কেন সবার সাথেই এমন ঘটনা কখনো না কখনো ঘটে থাকে। এর কারণ হতে পারে আপনার শিক্ষার্থী আপনার ক্লাসরুমের বাইরে কখনো চিন্তা করে না, আপনার সম্পর্কে জানেনা, তার সাথে আপনার সম্পর্ক শুধু ক্লাসরুমের মধ্যকার। ছাত্র-ছাত্রীদের যে কোনো আচরণ শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। তাই মনখারাপ বা রাগ না করে এই ধরনের সমস্যার সমাধান ঠাণ্ডা মাথায় করতে হবে যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীর অনুভূতিতে আঘাত না লাগে।
শিশুর সাথে একান্তে কথা বলুনঃ
যদি আপনি ক্লাসরুমের বিব্রতকর অবস্থার পরিবর্তন দ্রুত করতে চান তবে যে শিশুটিকে নিয়ে সমস্যা তাকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে কথা বলুন। আপনি ছাত্রদের দেখান যে আপনি তাদের পাশে আছেন এবং শ্রেণীকক্ষের প্রত্যেককেই সাহায্য করার চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আপনি কী আশা করেন তা স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করুন এবং একটি ভালো শ্রেণীকক্ষের জন্য সহায়ক হতে পারে এমন পরিবর্তনগুলি সুপারিশ করুন। আপনার ক্লাসে সমস্যা সৃষ্টিকারী ছাত্রটি সহপাঠীদের সামনে হয়তো তার সমস্যা সম্পর্কে বলতে বিব্রত বোধ করতে পারে তাই একান্তে কথা বলুন। এতে সেও আপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।
আচরণের কারণ জানার চেষ্টা করুনঃ
একান্তে কথা বলার সময় শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জানার চেষ্টা করুন তার এই আচরণের কারণ কী? হতে পারে শিশুটি হয়তো কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে পারছেনা, কিংবা কোনো জিনিস বা বিষয় বুঝতে তার সময় লাগে বলে সে অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে কিংবা সে হয়তো তার শিক্ষকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছে কিন্তু তা কিভাবে করবে বুঝতে পারছেনা। যে কোনো ভাবেই হোক খুঁজে বের করতে চেষ্টা করুন তার মনের কথা,তার অনুভূতি এবং তার আচরণের জন্য দায়ী কারণসমূহ। কারণ খুঁজে বের না করা গেলে সমস্যার সমাধান করা অসম্ভব।
আপনার স্কুলের নীতিমালাগুলি সম্পর্কে জানুন:
যে স্কুলে আপনি পড়ান ঐ স্কুলের নিয়মগুলো সম্পর্কে আপনাকে আগে জানতে হবে। আপনি কী করতে পারবেন কী পারবেন না, কোন সমস্যাগুলো আপনাকে স্কুল কমিটিকে বা প্রিন্সিপ্যালকে জানাতে হবে, অভিভাবকদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন হবে তা জানুন। কারণ কোনো কারনে কোনো অভিভাবক আপনার উপর রেগে গেলে তা আপনার শিক্ষকতা পেশার জন্য ভালো হবে না।
কার্যকর একটি ক্লাসরুটিন তৈরি করুনঃ
ক্লাসে কোন দিন কী পড়াবেন তা আগে থেকেই রুটিন আকারে শিক্ষার্থীদের দিন। কারণ অনেক শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় কী পড়তে হবে বা কী করতে হবে তা আগে থেকে জানলে সে নিজেই নিজের মত করে পড়তে পারে এবং ক্লাসের প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে।
শিশু সম্পর্কে একটি ইতিবাচক গুণ খুঁজুন:
যদি আপনি একটি ছাত্রের নেতিবাচক গুণাবলী্র উপর ফোকাস করেন, এটা আপনাকে তার সম্পর্কে খারাপ অনুভূতিই শুধু দিবে। ঐ শিশুটির একটি হলেও ইতিবাচক গুন খোঁজার চেষ্টা করুন যার মাধ্যমে আপনি একাধিক উপায়ে তাকে সাহায্য করতে পারেন। আপনার ছাত্রের মতামতকে গুরুত্ব দিন, তার ইতিবাচক গুণটির জন্য প্রশংসা করুন। এতে তার সাথে আপনার একটি ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে উঠবে যা তার আচরণের উপর প্রভাব ফেলবে। কিছু বিশেষজ্ঞরা একটি ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি এবং ভাল আচরণকে উৎসাহিত করার জন্য প্রতিদিন যে ছাত্রটির আচরণে সমস্যা তাকে পাঁচটি ভালো বা চমৎকার কথা বলার পরামর্শ দেন।
এছাড়া যে শিক্ষার্থীকে নিয়ে সমস্যা সে যদি আগে থেকেই আপনার স্কুলে পড়ে তাহলে পূর্ববর্তী ক্লাসের যিনি শিক্ষক ছিলেন তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।
একজন দক্ষ শিক্ষক তার গৎবাঁধা কাজের বাইরে গিয়েও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে, তাদের সাপোর্ট করতে অনেক কাজই করে থাকেন কিংবা কৌশল অবলম্বন করে থাকেন, তাই তাঁরা শিক্ষার্থীদের জীবন বদলে দিতে পারেন। আপনার ক্লাসেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন এমন কিছু কৌশল। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে Teachers Time এর এই কোর্সগুলো আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে – Understanding Your Students, Classroom Management Techniques ইত্যাদি।