২১ শতকে শিক্ষার একটি অপরিহার্য দিকহলো নেতৃত্ব। যেহেতু বিশ্ব এবং আমরা যেভাবে শিখি উভয়ই ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে, তাই শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য এখনই নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের কার্যকরী নেতৃত্ব শুরু হয় শিক্ষার্থীদের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে একটি নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করা যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই মূল্যবান এবং সম্মানিত বোধ করে। এছাড়াও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাত্মতা গড়ে ওঠে যা তাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকেও অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়। এটি শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখতে এবং শ্রেণীকক্ষে ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সহায়ক হয়।
শিক্ষায় নেতৃত্বের আরেকটি দিক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি শিখন-শিক্ষণকে আনন্দদায়ক, অভিনব এবং নমনীয় করে তুলে। পৃথিবী ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং তাই শিক্ষকদের জন্য নতুন প্রযুক্তি, শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশলের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমাগত প্রচেষ্টা ও জ্ঞানচর্চাই পারে শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে তাকে নিত্যনতুন আবিষ্কারের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে। শিক্ষার্থীদের সাথে তাল মিলাতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে আপ-টু-ডেট থাকা একজন সঠিক নেতৃত্ব দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য।
২১ শতকে নেতৃত্বের গুণাবলীর সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকে ক্রিটিকাল থিংকিং এবং সমস্যা সমাধানের মত আর বেশ কিছু দক্ষতা। একজন নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধান-ভিত্তিক শিক্ষা, প্রকল্প-ভিত্তিক শিক্ষা এবং আর বিভিন্নভাবে সক্রিয় শিক্ষায় জড়িত হওয়ার সুযোগ প্রদান করেন এবং এই দক্ষতাগুলি বিকাশে সহায়তা করেন। এটি শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলকভাবে চিন্তা করতে, সমস্যার সমাধান করতে এবং সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দক্ষ করে তোলে।
এছাড়া ২১ শতকের নেতৃত্ব শ্রেণীকক্ষে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে। একজন নেতৃত্বের গুণাবলীসম্পন্ন শিক্ষক শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অভিনব চিন্তা করতে এবং নতুন ধারণা অন্বেষণ করতে উত্সাহিত করেন। এটি শিক্ষার্থীদের নিজে নিজে বিভিন্ন প্রকল্পতে কাজ করার সুযোগ প্রদান করা যেতে পারে কেননা তাহলে এটি একইসাথে শিক্ষার্থীর নিজ নিজ আগ্রহের, পছন্দের ও অনুপ্রেরণার জায়গা খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
২১ শতকে নেতৃত্বের একটি অন্যতম দিক হলো দায়িত্বশীল বিশ্ব নাগরিক হয়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকে শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টির সাথে পরিচিত করা উচিত। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সচেতনতা তৈরি হয় এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বোধ জেগে ওঠে। এই বিষয়গুলি সম্পর্কে শেখার মাধ্যমে, শিক্ষকরা বিশ্বজগতের প্রতি শিক্ষার্থীদের দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে পারেন।
সবশেষে, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ২১ শতকে নেতৃত্ব হল একটি ইতিবাচক শ্রেণীকক্ষ সংস্কৃতি তৈরি করা, অভিনবত্ব এবং নমনীয় হওয়া, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধান করা, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন প্রচার করা এবং শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল বিশ্ব নাগরিক হতে শেখানো। এই দক্ষতাগুলি বিকাশের মাধ্যমে, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা উভয়ই বর্তমান বিশ্বে সফল হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে পারেন।
শ্রেণীকক্ষে নেতৃত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন Teachers Time এর Classroom Leadership কোর্সটি!