একজন শিক্ষকের কাজ কি তার ছাত্র – ছাত্রীদের শুধুই পড়ানো? হ্যাঁ, শিক্ষকের প্রধান কাজ অবশ্যই শিক্ষার্থীদের ষেখানো তবে এই শেখানো বা শিক্ষণকে তরান্বিত করার জন্য একজন শিক্ষককে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ভূমিকা পালন করতে হয়। নিচে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে একজন শিক্ষক তার দায়িত্বের পাশাপাশি অন্যান্য যেসব ভূমিকা পালন করেন তা নিয়ে আলোচনা করেছি।
অভিভাবক হিসেবেঃ অনেক সময় শিশুরা স্কুলে আসতে চায়না। এই আসতে না চাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন- হতে পারে সে লেখাপড়ায় ভালো করছে না, পড়ালেখা করতে তার ভালো লাগছে না অথবা স্কুলটা তার কাছে নিরাপদ মনে হচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে শিক্ষক যখন ক্লাসে পড়াবেন বা হোমওয়ার্ক দিবেন তখন যদি তিনি তার ছাত্র –ছাত্রীদের কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন ‘তুমি পারবে’—এই যে তুমি পারবে এই কথাটি এবং তার মাথায় হাত বুলানো এই বিষয় গুলোই তাকে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে এবং স্কুলটাকে তার নিরাপদ মনে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনি তার অভিভাবকের ভূমিকা পালন করলেন।
বন্ধু হিসেবেঃ একজন শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের বন্ধুও হতে পারেন। কিন্তু একজন শিক্ষক কিভাবে শিক্ষার্থীদের বন্ধু হবেন? একজন মানুষ, অন্য একজন মানুষের বন্ধু তখনই হয় যখন দু’জনের সুখ-দুঃখ, পছন্দ-অপছন্দ মিলে যায়। তাই একজন শিক্ষককে তার ছাত্রদের বন্ধু হতে হলে তাদের সম্পর্কে জানতে হবে।
ক্লাসে এসে শিক্ষক যে বিষয়টি পড়াবেন ঐ টপিকস সম্পর্কিত তার নিজের কোন মজার গল্প , ছোটবেলায় কী করতেন তা গল্পের মাধ্যমে বলতে পারেন। যেমন ধরুন, আপনি ক্লাসে জীববিজ্ঞান পড়াচ্ছেন বা গাছের যত্ন কিভাবে নিতে হয় তা পড়াচ্ছেন। এখানে পড়ানোর মাঝখানে আপনি আপনার ছোটবেলার গল্প বলতে পারেন ( প্রয়োজনে বানিয়ে বলেন)- “জানো আমি ছোটবেলায় গাছ তুলে ফেলতাম” – দেখবেন আপনার এই দুষ্টুমির সাথে অনেকের দুষ্টুমি মিলে যাবে বা না মিললেও তারা মজা পাবে। তখন তারা আপনাকে অন্য জগতের না ভেবে আপনাকে বন্ধু ভাবতে শুরু করবে এবং ক্লাসে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। ধীরে ধীরে তারা তাদের দুষ্টুমিগুলি আপনার সাথে শেয়ার করবে। এবার আপনি তাদের বলুন আপনি যখন জানতে পেরেছেন গাছের জীবন আছে, গাছ আমাদের অনেক উপকার করে তখন আপনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন। এটা জানার পর দেখবেন আপনার কষ্টের সাথে তারাও একাত্মবোধ করবে এবং এই কাজটি করা উচিত নয় ওরা নিজেরাই বলবে। সাথে এটাও বলবে ওরা এই কাজ কখনো করবে না।
পথপ্রদর্শক হিসেবেঃ একজন শিক্ষকের কাজ হলো তার ছাত্র-ছাত্রীদের গাইড হয়ে উঠা। কোন ছাত্র কোন বিষয়ে ভালো এবং কোন বিষয়ে একটু কম ভালো তা তার শিক্ষক খুব ভালো জানেন। যে বিষয়ে ভালো সে বিষয়ে তিনি তাদের বাহবা দিতে পারেন আবার যে বিষয়ে একটু কম ভালো সে বিষয়ে একটু উৎসাহী করে তুলতে পারেন এবং কীভাবে ভাবে ভালো করা যায় তার কিছু টিপস দিতে পারেন।
অনেক সময় ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন কারনে হতাশায় ভোগে। এই হতাশার কাটানোর জন্য তাদের আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে তার হতাশার কারণ জানার চেষ্টা করতে হবে, তার কষ্টের সাথে একাত্মবোধ করতে হবে, তাকে বোঝাতে হবে। এবং এই অবস্থা থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়, কীভাবে তার মানসিক অবস্থা ভালো করা যায় তার কিছু টিপস দিতে পারেন।
শিক্ষকতাই পৃথিবীতে একমাত্র পেশা যেখানে একই সাথে আপনাকে বিভিন্ন ধরণের ভূমিকা পালন করতে হয় ক্লাসে ও ক্লাসের বাইরে যার উপরে নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের শেখা এবং ভবিষ্যত। এই জন্য আমাদের প্রিয় মানুষদের তালিকা করতে গেলে বাবা-মায়ের পরে প্রথমেই আসে আমাদের শিক্ষকের নাম, যারা আমাদের নতুন জীবনের সন্ধান দেন। লেখাটি পড়ে চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন আপনার প্রিয় শিক্ষকের কথা যে আপনার জীবনের অনুপ্রেরণা। আপনি কি চান আপনার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপ্রেরণা হতে? কারণ এই দুর্লভ ক্ষমতা শুধু আপনারই আছে।
শিক্ষকতাকে আরো আনন্দময় ও দক্ষতাসম্পন্ন করতে Teachers Time থেকে আমরা রেখেছি Teaching সম্পর্কিত বিভিন্ন Course যার মাধ্যমে একজন সফল শিক্ষক হিসেবে আপনি নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আপনার সম্পর্কও আরো বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে Understand Your Student কোর্সটি আপনার জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে।
শুভকামনা সকল শিক্ষকের জন্য ।