সাধারণ অর্থে নিজের প্রতি নিজ আস্থা রাখাই হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। আরও সহজভাবে বলতে গেলে আত্মবিশ্বাস-নিজেকে নিজে বিশ্বাস করা, নিজের সম্পর্কে নিজের কাছে স্পষ্ট থাকা। “আত্মবিশ্বাস” একটি শক্তি যা আমাদের জীবনে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে।
বাবা-মা হিসেবে বাচ্চার আত্মনির্ভরশীলতা বা সেলফ কনফিডেন্স এর ব্যাপারে আপনি কি যথেষ্ট অবগত? শিশুদের আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে তোলার পেছনে বাবা-মায়ের প্রচুর অবদান রয়েছে। শিশু যদি আত্মনির্ভরশীলতার অভাবে ভোগে তবে তার জীবনে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। আত্মবিশ্বাসী শিশু জীবনের অনেক প্রতিকূলতা খুব সহজেই মোকাবেলা করতে পারে। জীবনের সকল পদক্ষেপ সঠিক ভাবে নিতে সেলফ কনফিডেন্স দারুণ সহায়তা করে থাকে।
শিশুর সেলফ কনফিডেন্স গড়ে ওঠা শুরু হয় নিজের ঘর থেকেই। তাই বাবা-মার উচিৎ কিভাবে বাচ্চার সেলফ কনফিডেন্স বাড়ানো যায় সেই দিকে লক্ষ্য রাখা।
শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সহজ কিছু উপায়ঃ
আত্ম মর্যাদা বোধ, যে কোন শিশুর মানসিক ও আচরণগত বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে, যে সব বাচ্চাদের আত্মবিশ্বাস কম, তারা সহজেই হাল ছেড়ে দেয়, হতাশ হয়ে পড়ে। সহনশীলতার মাত্রাও থাকে এদের খুব কম।
শিশুর আচরণগত পরিবর্তন আনতে চাইলে, বাবা-মা’র জন্য প্রথম শর্ত হল, শিশুকে যথেষ্ট এবং প্রয়োজনীয় আদর ভালোবাসা এবং তাদের ওপর মনোযোগ দিতে হবে।
১। শিশুর আচরণগত বিকাশের ক্ষেত্রে বাবা-মা’ কে হতে হবে তার শিশুর কাছে সব চেয়ে ইতিবাচক আদর্শ।
২। বাবা-মা শিশুকে কি বলছেন এবং কিভাবে বলছেন, সেটা অবশ্যই মাথায় রেখে শিশুদের সাথে আচরণ করতে হবে।
৩। দূর্বলতাগুলোকে শিশুর কাছে প্রাধান্য করে না তুলে বাবা-মা’র দায়িত্ব হচ্ছে ,শিশুটিকে বোঝানো যে,“সে সব বিষয়েই ভালো। শুধু অঙ্কটাতে একটু খারাপ করছে সেটাতে সময় দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। শিশুটিকে আশ্বস্ত করা। ভুল করলে মা-বাবা আছেন শেখানোর জন্য এই বিষয়ে তাকে আস্থা দেওয়া।
৪। শিশুর জন্য নিরাপদ সুন্দর, স্থিতিশীল পারিবারিক পরিবেশ দেবার পাশাপাশি আরো যে বিষয়টা বাচ্চার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে, সেটা হল – বাচ্চাকে ইতিবাচক এবং সঠিকভাবে তার ভুলটা ধরিয়ে দেয়া।
৫। বাচ্চাদের মধ্যে প্রতিযোগী মনোভাব গড়ে তোলার চেয়ে, ওদেরকে যে কোন কাজে অংশ গ্রহণ করানোটা অনেক জরুরী। যেমনঃ দুজন বাচ্চাকে কোন কাজ করানোর সময়- “দেখি তো এই অঙ্কটা কে বেশী ভালো পারে? বলার চেয়ে, যে ভালো পারছে, তাকে উৎসাহিত করা অথবা দুজন মিলে এক সঙ্গে কর,” বলাটা অনেক শ্রেয়। তাহলে একজন শিশু তার সমবয়সী আরেক জনকে সহযোগীতা করতে শিখবে।
৬। শিশুর কাজে প্রশংসা করুন, এতে সে নিজের কাজ নিজে করতে অনুপ্রাণিত হয়। যা তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সহায়তা করে।
৭। নতুন নতুন জায়গা এবং মানুষের সাথে শিশুকে পরিচয় করানোর মাধ্যমেও বাচ্চার আত্মবিশ্বাস বাড়ানো সম্ভব। কারণ এতে করে সে নিজেকে অন্যের কাছে উপস্থাপন করে।
৮। শিশুর কথা আগ্রহ সহকারে শোনা এবং তাদের Interest আছে এমন সব কাজে প্রাধান্য দেওয়া।
আত্ম-বিশ্বাসের অভাব, শিশুদের আচরণের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে যেটা শিশুর আচরণ গত জটিলতা তৈরী করে এবং সেটা তার প্রাপ্ত বয়সকেও পরিচালিত করে।
সুতরাং যে সব বাবা-মা মনে করছেন, একটা সময়ের পর আর নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো সম্ভব না, সেই সব বাবা-মা’র মনে রাখতে হবে-আত্মবিশ্বাস বা আত্মমর্যাদা জন্মগত কোন বিষয় নয়, এটি মানুষ অর্জন করে তার বেড়ে ওঠার পরিবেশ থেকে। কাজেই একজন বাবা-মা’র দায়িত্ব শিশুর জীবনে অসীম।