fbpx
The way a teacher changed the lives of two students

আমরা ছোট থেকে সবচেয়ে বেশি যে কথাগুলো শুনি তার মধ্যে অন্যতম হল – এটা ভুল, এটা হয়নি, এটা করবে না, তুমি কিচ্ছু পারোনা, তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না, ওকে দেখে শেখ ইত্যাদি।

একবার ভেবে দেখুন তো যখন আপনি কিংবা আমি এই কথাগুলো প্রতিনিয়ত শুনি, আমাদের মনের অবস্থা কী হয়, মনের উপর কতোটা চাপ পড়ে! নিজের উপর রাগ হয়, আত্মবিশ্বাস কমতে থাকে এবং একসময় মনে হয় যে সত্যিই বোধহয় আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, আমি কিচ্ছু পারিনা। এভাবে ধীরে ধীরে নেতিবাচক কথাগুলো আমাদের মনোবলকে ভেঙ্গে দেয়, আমাদের লুকানো প্রতিভাগুলো নষ্ট করে। 

প্রথমে বাড়ি, স্কুল, বন্ধু-বান্ধব এবং পরে চাকরিক্ষেত্রে এই নেতিবাচক কথাগুলো আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়,হীনম্মন্যতায় ভোগায়, যার প্রভাব পড়ে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে।

একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে তার ছাত্র-ছাত্রীদের মনে দীর্ঘদিন ধরে বাসা বেঁধে থাকা এই নেতিবাচক মানসিকতা দূর করে, তাকে বোঝাতে সক্ষম হওয়া যে –“আমিও পারি, আমিও পারব”। একজন প্রকৃত শিক্ষক মন থেকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে তার ছাত্র-ছাত্রীরা সব পারবে এবং সেই বিশ্বাসকেই তিনি প্রতিনিয়ত বাস্তবতায় পরিণত করতে চেষ্টা করেন। এই অসম্ভব তখনই সম্ভব হয় যখন শিক্ষক নিজে ইতিবাচক মানসিকতাসম্পন্ন হন এবং বিভিন্নভাবে তা ছাত্রছাত্রীদের ছড়িয়ে দেন। 

চলুন তবে এমন একজন শিক্ষকের গল্প শুনি। তার নাম…… আচ্ছা নাম নাহয় একটু পরেই বলছি।

আমাদের গল্পের এই শিক্ষক গ্রেড ফোরে পড়াতেন। সকালে তার ক্লাসে ঢুকে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিন তাদের ডেস্কের উপর একটি করে হলুদ রঙের স্টিকি নোট পেত, যেখানে লেখা থাকত নানারকম ইতিবাচক ও অনুপ্রেরণামূলক কথা, থাকত তাদের পারফরমেন্সের উপর বিভিন্ন মন্তব্য। ছাত্র-ছাত্রীরা  ক্লাসে  ঢুকে তাদের এই উপহার হাতে নিয়ে শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে একটি চমৎকার হাসি দিয়ে ক্লাসের কাজ শুরু করত, আর এই ভাল লাগার অনুভূতি ছাত্রছাত্রীদের সারাদিন চালিত করত নিজেদের সেরাটা দিতে। এভাবেই চলতে লাগল, সবাই ধীরে ধীরে ক্লাসে খুব মোটিভেটেড ও আগ্রহী হয়ে উঠলো।

একদিন মি. জোবেক (নামটা বলেই ফেললাম) টিচার রুমে ঢুকে দেখলেন তার জন্য কিছু স্টিকি নোট তার ডেস্কের উপর রাখা আছে। তারমধ্যে দুইটি লেখা  মি. জোবেককে নাড়া দিয়ে যায়।

Teachers Time - Untitled design 10

Teachers Time - Untitled design 10
Teachers Time - Untitled design 9

নাম লেখা না থাকলেও হাতের লেখা দেখে মি. জোবেক বুঝলেন এগুলো কাদের লেখা। প্রথমটি জিলিয়ান আর পরেরটি কাইলের। জিলিয়ান আর কাইল দুজনেই গ্রেড থ্রি থেকে উঠে আসা সবচেয়ে পিছনের দিকের ছাত্রছাত্রী। দুজনেই গরিব ঘরের সন্তান। পরিবারের কেউই কলেজ পর্যন্ত যায়নি। কাইলের বাবা তার মাকে ছেড়ে গেছেন অনেক আগেই। জিলিয়ানদের ৪ ভাইবোন। বাবা ২ টি পার্টটাইম কাজ করেন। টাকাপয়সার কষ্ট নিত্যদিনের ঘটনা। এবং এ নিয়ে সংসারে অশান্তি এবং ঝগড়া সবসময় লেগে আছে।

এসবের কিছুই মি. জোবেক জানতেন না যখন তারা প্রথম গ্রেড ফোরে পড়তে আসে। আস্তে আস্তে তাদের সাথে আলাপের মাধ্যমে এসব তিনি জেনেছেন। তাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির শুরুটা যে পরিবার থেকেই সেটা তিনি বুঝে নিয়েছিলেন তখন। এরপর থেকে তাদের জন্য যেসব নোট লিখতেন সেগুলো হত কিছুটা আলাদা। কোনদিন হয়তো বড় কোন মানুষের কথা লিখতেন যারা তাদের চেয়ে খারাপ জায়গা থেকে উঠে এসেও পৃথিবী জয় করেছেন, কোনদিন হয়তো থাকতো লাইব্রেরি থেকে কোনও একটা বই নিয়ে পড়ার উপদেশ। তিনি কখনই লিখতেন না যে এই বিষয়ে তাদের মনোযোগ দিতে হবে, এই পড়াটা তার শেষ করতে হবে।

তার দীর্ঘ শিক্ষক জীবনে তিনি বুঝেছেন যে যতক্ষণ না পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীর মনোবল এবং আত্মবিশ্বাস না নিয়ে আসতে পারছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সেরাটা আসবে না। আর এই কাজ ধমক দিয়ে, ভয় দেখিয়ে বা অভিভাবক ডেকে বিচার দিয়ে ঠিক হবে না।  মি. জোবেক বিশ্বাস করেন, শিক্ষকের সামান্য ছোট্ট ইতিবাচক কথাই পার্থক্য সৃষ্টি করে, পরিবর্তন করতে পারে তার ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন।

আর এর ফলাফল তিনি আরও একবার পেলেন। গত সপ্তাহে মিডটার্ম রেজাল্ট হয়েছে। জিলিয়ান এবং কাইল মাত্র ৬ মাসে শেষ সারির থেকে উঠে এসেছে সেরা দশে। আর আজকে এসে তিনি ডেস্কে এই নোটগুলো পেলেন। নোটগুলো দেখতে দেখতে মুখে হাসির সাথে সাথে চোখের কোণে একটু পানিও এলো।

পৃথিবীতে একমাত্র ইতিবাচকতা আর ভালবাসাই ফিরে আসে দ্বিগুণ হয়ে। এটা বোধকরি শিক্ষকদের থেকে ভাল কেউ জানে না, তাইনা?

শিক্ষকতাকে আরও সহজ প্রাণবন্ত ও বাস্তবমুখী করে তুলতে Teachers Time থেকে আমরা রেখেছি বেশ কিছু Course যার মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে আপনি শিক্ষার্থীদের আরও ভালো বুঝতে পারবেন, তাদের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলতে পারবেন এবং ক্লাসগুলোও হয়ে উঠবে আগের চেয়ে অনেক বেশি আনন্দময়। কোর্সগুলো হলো – Understand Your Students, How Children Learn, Effective Teaching Techniques ইত্যাদি।

শিক্ষকদেরকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড, যথার্থ হোক এই নামকরণ। টিচারস টাইমের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষকের জন্য রইলো অনেক অনেক শুভকামনা।

0 Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *