ক্লাসে শিশুরা কিভাবে শেখে? শুধু কি লেকচার শুনে বা বই পড়ে?
আসলে আমরা নানাভাবে শিখি এবং সবসময়ই শিখি। শিখন একটি চলমান প্রক্রিয়া যা সবসময় সক্রিয়। লেখা-পড়ার ক্ষেত্রেও তাই। শুধু শিক্ষকের কথা শুনে, বই পড়ে বা বিভিন্ন ক্লাস টাস্কের মধ্যে দিয়ে নয় বরং ক্লাসে একে অপরের সাথে কথা বলে, অভিজ্ঞতা থেকে এমনকি ক্লাসে টাঙানো ছবি বা পোস্টার থেকেও ছাত্র-ছাত্রীরা শেখে।
গবেষণায় দেখা যায়, শেখার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী ৬৫% মানুষ দ্রুত ও কার্যকরভাবে, এবং আগ্রহের সাথে শেখে যখন ভিজুয়াল এইড ব্যবহার করা হয়। আর ভিজুয়াল এইডের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হল পোস্টার।
ক্লাসে আমাদের ব্যবহৃত সবচেয়ে পরিচিত ও সহজলভ্য উপকরণ হল বিভিন্ন পোস্টার যা শুধু ক্লাসের সৌন্দর্যবর্ধনই করে না বরং শিক্ষককে ক্লাসের বিভিন্ন বিষয় পড়ানোয় সাহায্য করার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের শেখার প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করে।
আসুন জেনে নেই ক্লাসরুমে পোস্টার ব্যবহারের কিছু সুবিধাঃ
১। ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণের এবং আগ্রহ ধরে রাখার একটা সহজ উপায় হল পোস্টার ব্যবহার। এমনকি কোন বিষয় শেখার জন্য এটি শিক্ষার্থীদের মোটিভেটও করে।
২। নির্দিষ্ট কোন আইডিয়া, ফ্যাক্ট, ঘটনা বা প্রক্রিয়া বোঝার জন্য যে ধরণের ফোকাস থাকা দরকার তা সৃষ্টিতে পোস্টার-এর কোন বিকল্প নাই।
৩। ছবি ও শব্দের সমন্বয়, শুধু শব্দের চেয়ে শেখার প্রক্রিয়াকে কার্যকর এবং দ্রুত করে যা পোস্টারে পাওয়া যায়।
৪। ক্লাসরুম পোস্টারের সবচেয়ে বড় উপোযোগিতা হল, এটা থেকে শিক্ষার্থীরা সবসময় শিখতে পারবে, শুধু ক্লাসের চারদেয়ালে একবার চোখবুলিয়ে।
বিভিন্ন রঙের চার্ট পেপার ও মার্কার দিয়ে, এবং এর সাথে ছবি জুড়ে খুব সহজেই আপনি তৈরি করতে পারবেন আপনার ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় পোস্টার।
ক্লাসরুম পোস্টার বানানোর জন্য যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবেঃ
১। পোস্টারগুলো রঙ্গিন, আকর্ষণীয় ও সুন্দর ডিজাইনের হতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা তা দেখতে আগ্রহ বোধ করে।
২। পোস্টারের লেখাগুলো অবশ্যই পরিষ্কার ও বোধগম্য হতে হবে যা দূর থেকেই, ক্লাসের বিভিন্ন অবস্থানে বসা শিক্ষার্থীরা দেখতে পারে।
৩। অবশ্যই কোন না কোন বিষয় ও উদ্দেশ্য মাথায় রেখে পোস্টারগুলো বানাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে পোস্টার যেন অর্থহীন না হয়, কোন প্রয়োজনীয় তথ্য বা বার্তা থাকা আবশ্যক।
৪। পোস্টারগুলো যেন শিক্ষার্থীর গ্রেড লেভেল ও বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
৫। পোস্টার বানানোর জন্য যে বিষয়টা খেয়াল রাখা জরুরী সেটা হল পোস্টারে যেন শব্দের চেয়ে ছবি বেশি থাকে।
৬। পোস্টারগুলা সিম্পল হওয়া ভাল কারণ এতে অতিরিক্ত তথ্য বা অপ্রয়োজনীয় ডিজাইন-শব্দ-ছবি ইত্যাদি থাকলে মূল বার্তা অথবা তথ্য হারিয়ে যায়।
৭। পোস্টারগুলো এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যেন তা লজিক্যালি সিকয়েন্সড থাকে, যাতে যে তথ্য দেওয়ার তা সহজেই বোধগম্য হয়।
এই সাধারণ পোস্টারকে আমরা একটু অন্যরকমভাবে ব্যবহার করতে পারি, বৈচিত্র এনে ।
আসুন দেখে নেই কিছু আইডিয়া, যেভাবে আমরা পোস্টার ভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারি।
১। আচরণ সংক্রান্ত পোস্টারঃ ক্লাসে যে বিষয়টি নিয়ে আমরা শিক্ষকেরা চিন্তিত থাকি তা হল ছাত্র-ছাত্রীদের আচরণ।কিছু পোস্টার রাখা যেতে পারে যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের করণীয়, প্রত্যাশিত ব্যবহার ও আচরণ ইত্যাদি থাকবে।
২। লাইফ স্কিল পোস্টারঃ লাইফ স্কিল সম্পর্কিত কিছু পোস্টার রাখা যেতে পারে যেগুলো ক্লাস ম্যানেজমেন্ট-এ সাহায্য করবে।
৩। ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট-এর পোস্টারঃ আপনার ক্লাসরুম দক্ষতার সাথে ম্যানেজ করতে যেসব আচরণ এবং করণীয় তা আপনি বিভিন্ন পোস্টারে ক্লাসরুমে রাখতে পারেন যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের নজর থাকে সেগুলোর প্রতি সবসময়। আপনার ক্লাসের নিয়মগুলো অন্তর্ভূক্ত থাকতে পারে এখানে এবং আপনি নির্ধারণ করতে পারে কিছু থিম যেমন- সুপার হিরো।
৪। সহযোগীতা ও বন্ধুত্বের শিক্ষা সংক্রান্ত পোস্টারঃ ক্লাসে কিছু পোস্টার রাখতে পারেন সেগুলো নির্দেশ করবে ক্লাসটাস্কের সময় ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকা ও আচরণ কেমন হবে। এই পোস্টারগুলোর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা জানতে পারবে কিভাবে সহযোগীতামূলক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে একসাথে কাজ করতে হয়, সামাজিক যোগাযোগ তৈরি হয় এবং তা অনুশীলন করতে পারবে ক্লাসে।
৫। শিক্ষামূলক পোস্টারঃ বিষয়ভিত্তিক কিছু পোস্টার রাখতে পারেন ক্লাসে যা আপনাকে পড়াতে সাহায্য করবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের শিখতে।
৬। অনুপ্রেরণামূলক উক্তিঃ কিছু কথা বা উক্তি আমাদের অনুপ্রাণিত করে, কাজে উৎসাহ দেয়। এরকম কিছু অনুপ্রেরণামূলক কথা বা উক্তি লেখা থাকতে পারে বিভিন্ন পোস্টারে।
এই ধরণের পোস্টারগুলো কিছুদিন ক্লাসে ব্যবহার করলে আপনি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পারবেন যার জন্য হয়তো এতদিন ধরে নানারকম চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। তাই দেরি না করে আজই শুরু করে দিন পোস্টারের ব্যবহার বিভিন্নভাবে আপনার ক্লাসে।