শিশুমাত্রই সবার আদরের ও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু কোনো কোনো শিশু মাঝেমধ্যেই এমন সব আচরণ করে যে বাবা-মা সেই অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের কারণে সবার সামনে ভয়ানক বিব্রতবোধ করেন। অনেক সময় দেখা যায়, খুব মিশুক ও প্রাণোচ্ছল শিশুটাও কোনো কারণে হুটহাট রেগে গিয়ে মা-বাবা, শিক্ষক এবং অন্যান্যদের শারীরিকভাবে আঘাত করে, জিনিসপত্র ছোঁড়াছুড়ি ও ভাঙচুর করে। কখনো কখনো আবার শিশুদের মধ্যে অকারণে মিথ্যা বলা ও আক্রমণাত্মক আচরণ করার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। বাবা-মা এবং শিক্ষক উভয়ের জন্যই শিশুর আচরণগত সমস্যা গুলোর সমাধান করা বেশ বড় চ্যালেঞ্জ।
যেমন হওয়া উচিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর সাথে আচরণ
এছাড়াও আমাদের আশেপাশে অনেক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু রয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রতি আমাদের আচরণটাও বিশেষ হওয়া প্রয়োজন। পাঁচ বছর বয়সী অন্য দশটি শিশুর সাথে যেভাবে বা যে অ্যাপ্রোচে মা-বাবা ও শিক্ষকদের কথা বলতে হয়, একটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে অ্যাপ্রোচটি অনেকাংশেই বদলে ফেলতে হয়। কিন্তু এ বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকেই দুশ্চিন্তায় ভোগেন। শিশুর আচরণগত সমস্যা শনাক্ত হলে বা আচরণে আগ্রাসন ও নেতিবাচকতা প্রকাশ পেলে, কিংবা শিশুর মধ্যে বিশেষ কোনো চাহিদা শনাক্ত হলে কখনোই তার প্রতি বিরক্ত হওয়া যাবেনা। বরং এইসব পরিস্থিতিতে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে শিশুর প্রতি ধৈর্য্যশীল আচরণ করলে শিশুও ধীরে ধীরে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে।
শিশুর রাগ কমানোর উপায় যেমন হতে পারে
কোনো কোনো শিশুর রাগ তার বয়সী অন্যান্য শিশুদের তুলনায় বেশি হয়। মাঝে মাঝে শিশু রাগ কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অন্যদের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় মা-বাবা ও শিক্ষকগণ শিশুদের বকাঝকা করেন। এমন পরিস্থিতিতে শিশুকে বকাঝকা না করে শিশুর রাগ কমানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। বকাঝকা কিংবা শাস্তি শিশুর আচরণকে আরও নেতিবাচক দিকে প্রবাহিত করতে পারে। শিশুর রাগ কমানোর অনেক বিজ্ঞানসম্মত উপায় আছে যার মাধ্যমে ধীরে ধীরে শিশুর রাগ কমিয়ে আনা যায়। এটিও শিশুর আচরণগত সমস্যা দূরীকরণ বা children behavior management এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের কারণ শনাক্তকরণ
শিশুদের মাঝে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বা নেতিবাচক আচরণ চিহ্নিত হলে বা শিশুর আচরণগত সমস্যা শনাক্ত হলে প্রথমেই বুঝতে হবে এর কারণটা কী। জানতে হবে কোন বিষয়গুলো শিশুর নেতিবাচক আচরণকে ট্রিগার করছে, শিশু কী পছন্দ করছে, কী অপছন্দ করছে ইত্যাদি সবকিছু। শিশুকে বোঝাতে হবে শিশু যে আচরণটি করছে সেটি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। শিশুর আচরণকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে শিশুর পরিবার। তাই পরিবারে সচেতনভাবে একটি ইতিবাচক আবহ তৈরি করতে হবে। শিশুর সাথে পরিবারের সকল সদস্য বিশেষ করে মা-বাবার কোয়ালিটি সময় কাটাতে হবে। শিশুর মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে শিশুর আচরণগত সমস্যা সমাধান বা Children Behavior Management করতে হবে।
শিশুর আচরণ ব্যবস্থাপনায় কোয়ালিটি টাইমের গুরুত্ব
বর্তমান সময়ে অনেক বাবা-মা সন্তানের সাথে কোয়ালিটি টাইম কাটাতে ব্যর্থ হন। কোনোরকম ইন্টার্যাপশন ছাড়া নিজে কাজ করার জন্য তারা শিশুর হাতে বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক ডিভাইস তুলে দেন যা পরবর্তীতে শিশুর মোবাইল আসক্তি কিংবা ভিডিও গেইম আসক্তিতে রূপ নেয়। শিশুকে ব্যস্ত রাখার জন্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের পরিবর্তে শিশুকে মজার মজার বিভিন্ন খেলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এতে করে শিশু অন্যদের সাথে সহজ ও স্বাভাবিকভাবে মিশতে শেখার পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটবে। মা-বাবা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখাদেখিও অনেক শিশুর মোবাইল আসক্তি তৈরি হয়। যেসব শিশুরা একা একা থাকতে পছন্দ করে, অনেক কথা শুনেও না শোনার ভান করে কিংবা তার বয়সী অন্যান্যদের তুলনায় কিছুটা চুপচাপ সেসব শিশুর মোবাইল আসক্তি বা টিভি, ভিডিও গেইমসের নেশা আরো ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে যা অনেকে শিশুর আচরণগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাই শিশুর এসব ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, Children Behavior Management এর পূর্বশর্ত হলো শিশুর সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা এবং শিশুর সামনে তার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত আচরণটি বিভিন্নভাবে তুলে ধরা।
শিশুর আচরণগত সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের করণীয়
মা-বাবার পরে শিশুদের সাথে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটান শিক্ষক। একজন দক্ষ শিক্ষক শিশুর আচরণকে প্রায় পুরোপুরিভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আবার ক্লাসে কোনো একজন শিক্ষার্থী অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করলে কিংবা তার আচরণ অন্যদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন হলে শিক্ষকের পক্ষে তখন পুরো ক্লাসটাকে নিয়ন্ত্রণ করাই বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। শ্রেণিকক্ষে কোনো শিশুর আচরণগত সমস্যা থাকলে শিক্ষককে ক্লাসরুমে এমন সব অ্যাক্টিভিটি প্ল্যান করতে হয় যার মাধ্যমে ক্লাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে, সবার শিখন নিশ্চিত করা যায়। একজন শিক্ষক কেবল তখনই সফলতার সাথে এই কাজটি করতে সক্ষম হন যখন তিনি শিশুর বিকাশের বৈজ্ঞানিক ধারণা, শিশুর সাচরণগণগত সমস্যার কারণ ও শিশুর আচরণ ব্যবস্থাপনা বা children behavior management সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। ক্লাসে অনাকাঙ্ক্ষিত বা সমস্যামূলক আচরণকারী শিক্ষার্থীকে কখনোই সবার সামনে বকা-ঝকা বা মারধোর করা যাবেনা বরং তাকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে তার সমস্যাগুলোকে বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে তার মা-বাবার সাথে কথা বলতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিশু যাতে কোনোভাবেই অসম্মানিতবোধ না করে। শিক্ষকের কোনো আচরণে সামান্যতম ত্রুটির কারণে শিশুর মানসিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। এমনকি শিশুর আত্মবিশ্বাস আজীবনের জন্য ভেঙ্গে যেতে পারে। এই কারণে শিশুর আচরণগত সমস্যা সমাধানে একজন শিক্ষককে বিরক্ত বা ধৈর্য্যহারা হলে চলেনা, বরং তাকে পাহাড়সম ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হয়।
আপনি কি জানেন? এই বিষয়ের কোর্স ও হয়!
শিশুকে খাবার খাওয়ানো থেকে শুরু করে, শিশুর সাথে খেলা – প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে শিশুর নেতিবাচক আচরণ পরিবর্তন করা যায়। তবে এই বিষয়গুলো নিয়ে যে কোর্স হয় সেটাই আমরা অনেকে জানিনা, কিংবা মনেও করি না যে আসলেই এই বিষয়ের কোর্স করা প্রয়োজন।
গত কয়েক বছর যাবত Teachers Time থেকে বিভিন্ন Parenting Training করানোর মাধ্যমে আমরা এমন কিছু বিষয় জানতে পেরেছি যেসব বিষয়ে অভিভাবকেরাও চায় কোর্স করতে! এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিভাবক আগ্রহী শিশুর আচরণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোর্স করতে। যেখান থেকে তারা জানতে পারবে শিশুর বিভিন্ন ধরণের নেতিবাচক আচরণ, রাগ-জেদ, মোবাইল আসক্তি, খাবার খেতে না চাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন নেতিবাচক আচরণের কারণ ও ব্যবস্থাপনার উপায় সম্পর্কে। তাই আমরা Teachers Time এবং Institute of Child & Human Development-ICHD নিয়ে এসেছি Children Behavior Management বিষয়ে ২ মাসের সার্টিফিকেট কোর্স! দেশের সেরা Child Development Expert-দের থেকে অনলাইনেই শিশুর আচরণ ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলো জেনে নিতে পারবেন খুব সহজেই।
Click here to enroll for Children Behavior Management course!