৮ জন শিক্ষককে আমরা বলেছিলাম, আচ্ছা ধরুন আপনাদের ১০ মিনিট সময় দেয়া হল। এই ১০ মিনিট আপনি টিভির সামনে বাংলাদেশের ৩ কোটি শিশুকে একজন শিক্ষক হিসেবে যদি কিছু কথা বলার সুযোগ পান তাহলে কী বলবেন? ৩ কোটি শিশুর সবাই টিভির সামনে বসা আছে, তারা সবাই তাকিয়ে আছে স্ক্রিনের দিকে আপনার কথা শোনার জন্য।

(শিশুদের বয়স কত – কম না বেশি, সব কথা বুঝবে কিনা – এরকম প্রশ্ন করলেন একজন। আমরা বললাম, ধরে নিন শিশুর বয়স যদি ৩-৪ বছরও হয় সে আপনার কথা বুঝবে, সমস্যা নেই। কল্পনা যেহেতু করছি, কল্পনাতে এটা ভেবে নেওয়াই যায়।)

আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল এটা বোঝা যে, শিক্ষকরা আসলে তাদের শিক্ষার্থীদের কী বলতে চান। স্কুলের পড়ার চাপ, সিলেবাস শেষ করার চাপে আর অন্য কাজের চাপে হয়তো আজকাল শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের বলতে চাইলেও, সময় দিতে চাইলেও পারেন না।

কিন্তু এমন যদি সুযোগ পান যে ৩ কোটি শিশু আপনার দিকে তাকিয়ে আছে কথা শোনার জন্য, এখন আপনি কী বলবেন ?

শিক্ষকরা যে বিষয়গুলো বাংলাদেশের শিশুদের বলতে চান, সেগুলোই আমরা নিচে একের পর এক সাজিয়ে লিখলামঃ

১। তোমাদের যে খালি স্কুলের পড়ার বই থেকেই শিখতে হবে এমন কোন কথা নেই। শিখতে পারো সব জায়গা থেকেই, আমাদের চারপাশে আছে শেখার অনেক কিছু।

২। যা শিখতে মন চায়, যা পড়তে মন চায় – সেটাই পড়। শেখার মধ্যে যে আনন্দ আছে সেটা নিয়ো। আর যা শিখছ সেটা ভালো কাজে লাগাতে চেষ্টা করো। তোমার পছন্দের বইগুলো খুঁজে পেতে ক্লিক করতে পারো Togumogu   তে ।

৩। Be curious. প্রচুর প্রশ্ন করবে। যা জানতে মন চাবে, যা বুঝতে পারছ না – সেটি নিয়েই প্রশ্ন করবে। যাকে সামনে পাবে তাকেই জিজ্ঞেস করো – তোমার মা-বাবা, তোমার শিক্ষক, তোমার বন্ধু বা অন্য কেউ। আর এখন তো চাইলে ইন্টারনেটেও কত কিছু শিখে ফেলা যায়, জেনে ফেলা যায়।

৪। তুমি সবার চেয়ে আলাদা। তোমার মতো পৃথিবীতে আর একজনও নেই। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখবে। এমন কিছুই নেই যে তুমি চাইলে করতে পারবে না। কিন্তু নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, তুমি কী করতে চাও, কী হতে চাও, কী করতে তোমার ভালো লাগে, আনন্দ লাগে – আর তারপর সেটাই করো।

৫। যদি কোন কিছুতে ব্যর্থ হও, বা খারাপ করো – যেমন কোন একটা পরীক্ষায় খারাপ হল, এতে করে কখনও নিজের প্রতি বিশ্বাস হারাবে না। কেউ যদি তোমাকে বলে, ‘তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না’, তাহলে তার কথা ভুলেও বিশ্বাস করো না। এমনকি তোমার শিক্ষক বা মা-বাবা বললেও না।

৬। সবাইকে সম্মান করবে সবসময় – তোমার বাবা-মা, শিক্ষক, গুরুজন। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করবে, এমনকি তারা তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও। আর সবার কাছে শেখার আছে, তোমার চেয়ে ছোট যে সেও তোমাকে শেখাতে পারে।

৭। জীবনটা একটা adventure এর মতো, জীবনে সুখী হওয়া বা আনন্দে থাকা সবচেয়ে বড় বিষয়।

৮। মিথ্যা বলা, অন্যকে কষ্ট দেয়া, শুধু নিজের ভালো চিন্তা করা – এগুলো এক সময় তোমার আনন্দকে নষ্ট করবে।

৯। নিজেকে কখনও অন্যের সাথে তুলনা করবে না। নিজের যা আছে সেটা নিয়ে খুশি থাকাটাও আনন্দের। জেনে রেখো, তোমার চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থায় অনেকে আছে।

১০। পুরো পৃথিবীকে বদলে দেয়ার ক্ষমতা তোমার মধ্যে আছে। তোমাকে শুধু চেষ্টা করতে হবে।

এই ১০ টি মেসেজ শিক্ষকরা ১০ মিনিটে বাংলাদেশের ৩ কোটি শিশুকে দিতে চেয়েছেন। শিক্ষক হিসাবে আপনি যখন সুযোগ পাবেন, এই মেসেজগুলো আপনার শিক্ষার্থীদের দিতে চেষ্টা করবেন। তারা সারাজীবন আপনার কথা মনে রাখবে। আপনার এই কথাগুলো যদি একটা শিশুর জীবনও বদলে দিতে পারে, তাহলে জানবেন,  শিক্ষক হিসাবে আপনি সফল।

একই রকম আরও একটি প্রশ্ন আমরা শিক্ষকদের করেছিলাম যে ১০ মিনিট সময় পেলে বাংলাদেশের সব অভিভাবকদের আপনি কি বলবেন?সময় থাকলে এটিও পড়ে নিতে পারেন।

 

0 Shares